গর্ভাবস্থায় চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারীতা
গর্ভাবস্থায় চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা - চিনাবাদাম (Arachis hypogaea) একটা ছোট বাদাম যা লতানো গাছ থেকে আসে। এটা খুবই জনপ্রিয় এবং অনেক ভাবে খাওয়া যায়, যেমন কাঁচা, ভাজা, বা চিনাবাদাম মাখন। চিনাবাদামে অনেক প্রোটিন, ফাইবার, আর ভালো চর্বি থাকে, যা আমাদের শরীরের জন্য ভালো। এই কারণে, চিনাবাদাম খাওয়া আমাদের জন্য উপকারী।
আরো পড়ুন - গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
চিনাবাদামের পুষ্টিগুণ
এক আউন্স (২৮ গ্রাম) চিনাবাদামে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান রয়েছে:
- ক্যালোরি: 164
- প্রোটিন: 7 গ্রাম
- ফাইবার: 3 গ্রাম
- চর্বি: 14 গ্রাম
- সম্পৃক্ত চর্বি: 2 গ্রাম
- অসম্পৃক্ত চর্বি: 10 গ্রাম
- পলিআনস্যাচুরেটেড চর্বি: 2 গ্রাম
- কোলেস্টেরল: 0 মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম: 2 মিলিগ্রাম
- পটাসিয়াম: 370 মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম: 68 মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম: 30 মিলিগ্রাম
- আয়রন: 2 মিলিগ্রাম
- জিঙ্ক: 1.9 মিলিগ্রাম
- ভিটামিন ই: 12 মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি3: 1.3 মিলিগ্রাম
- ফোলেট: 20 মাইক্রোগ্রাম
গর্ভাবস্থায় চিনাবাদাম খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় মা যদি চিনাবাদাম খান, তাহলে সেটা মা আর baby দুজনেরই জন্য ভালো। চিনাবাদামে প্রোটিন, ফাইবার, আর ভালো চর্বি থাকে, যা গর্ভকালীন সময়ে শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এতে মা ও baby এর স্বাস্থ্য ভালো থাকতে সাহায্য হয়।
মায়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি:
চিনাবাদামে থাকা প্রোটিন, ফাইবার আর ভালো চর্বি মায়ের শরীরের জন্য ভালো কাজ করে। এটা মায়ের রক্তচাপ ঠিক রাখতে আর কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, যা গর্ভাবস্থায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ:
চিনাবাদাম শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ এবং দৃষ্টিশক্তির উন্নতির জন্য সহায়ক। এতে থাকা স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং প্রোটিন শিশুর স্নায়ু সিস্টেমের উন্নতি ঘটায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
প্রিম্যাচিওর ডেলিভারি এবং নিম্ন জন্ম ওজনের ঝুঁকি কমায়:
গর্ভাবস্থায় চিনাবাদাম খেলে প্রিম্যাচিওর ডেলিভারি এবং কম জন্ম ওজনের ঝুঁকি কমানো যায়। এটি শিশুর সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়:
গর্ভাবস্থায় চিনাবাদাম খাওয়া গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। চিনাবাদামে থাকা ফাইবার রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
চিনাবাদাম খাওয়ার নিরাপত্তা
চিনাবাদাম সাধারণত খেতে নিরাপদ, তবে কিছু মানুষের চিনাবাদামের প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে। যদি আপনার চিনাবাদাম খাওয়ার ওপর অ্যালার্জি থাকে, তাহলে এটা খাওয়া উচিত নয়। তবে, গর্ভাবস্থায় ১-২ আউন্স (২৮-৫৬ গ্রাম) চিনাবাদাম খাওয়া নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর।
চিনাবাদাম খাওয়ার সঠিক সময়
সকাল:
খালি পেটে চিনাবাদাম খেলে শরীরে শক্তির জোগান পাওয়া যায় এবং ক্ষুধা কমে। চিনাবাদামে প্রোটিন এবং ফাইবার থাকার কারণে এটি আপনার দিন শুরু করতে সাহায্য করে।
দুপুরে:
দুপুরের খাবারের পরে চিনাবাদাম খেলে হজম ভালো হয়।
বিকেল:
বিকেলে চিনাবাদাম খেলে ক্ষুধা কম থাকে এবং রাত পর্যন্ত পেট ভরা থাকে।
রাতে:
ঘুমাতে যাওয়ার আগে চিনাবাদাম খেলে শরীরে প্রোটিন এবং ফাইবার সরবরাহ থাকে, যা ভালো ঘুমে সহায়তা করে।
চিনাবাদাম ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
চিনাবাদাম যদি পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়, তবে সেটা শরীরের জন্য অনেক ভালো। এতে যে পুষ্টি উপাদানগুলো থাকে, সেগুলো সহজে শরীরে পৌঁছায় এবং হজমও ভালো হয়। এর ফলে পেটের সমস্যা যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং রক্তচাপও ঠিক থাকে।
চিনাবাদামের অপকারিতা
চিনাবাদাম খাওয়া শরীরের জন্য ভালো, কিন্তু অনেক বেশি খাওয়া ঠিক নয়। এতে অনেক ক্যালোরি থাকে, তাই বেশি খেলে আমরা মোটা হয়ে যেতে পারি। কিছু কিছু মানুষের চিনাবাদামের সাথে সমস্যা থাকতে পারে, যার কারণে তারা চিনাবাদাম খেতে পারে না। আবার, চিনাবাদাম খেলে পেটে গ্যাস বা ফাঁপা হতে পারে।
উপসংহার
গর্ভাবস্থায় চিনাবাদাম খাওয়া মা আর শিশুর জন্য ভালো। কিন্তু খুব বেশি না, সঠিক পরিমাণে খাওয়া দরকার। যদি ঠিক সময়ে ও সঠিক পরিমাণে চিনাবাদাম খাওয়া হয়, তাহলে মা আর শিশুর শরীর আর মন ভালো থাকবে।