নামাজের নিয়ম | নামাজের নিয়মাবলী

নামাজের নিয়ম | নামাজের নিয়মাবলী

    নামাজের নিয়ম | নামাজের নিয়মাবলী - আল্লাহর বিধান পালন করা তাদেরই সম্ভব যাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর অসীম রহমত। তাঁর রহমত ব্যতিত কারো পক্ষে ইবাদাত-বন্দেগিসহ কোনো নেক আমল করাই সম্ভব নয়। ইবাদাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হচ্ছে নামাজ। যা ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। কিভাবে নামাজ পড়তে হয় তা তুলে ধরা হলো-

    আরো পড়ুন - গিয়ার সাইকেল দাম কত | সাইকেলের ছবি ও দাম ২০২৪

    হাইব্রিড বাই সাইকেল | সাইকেল দাম বাংলাদেশ ২০২৪

    মোটা চাকার সাইকেল দাম বাংলাদেশ  ২০২৪

    হিরো সাইকেলের ছবি ও দাম বাংলাদেশ ২০২৪

    লেডিস সাইকেল এর দাম কত

    অন্য পোষ্ট - বাংলাদেশের সবচেয়ে কম দামি মোবাইল

    নামাজের নিয়ম | নামাজের নিয়মাবলী

    আরো পড়তে পারেন - বিকাশ কাস্টমার কেয়ার চট্টগ্রাম | বিকাশ হেল্প লাইন ফোন নাম্বার  

    বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ কোনটি | বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ কোনটি


    নামাজের নিয়ম | নামাজের নিয়মাবলী


    নামাজ অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ ইবাদাত। তাই নামাজ সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন। ‘তোমরা সেভাবে নামায আদায় কর, যে ভাবে আমাকে নামায আদায় করতে দেখ।’ (বুখারি)। তাই আমাদের উচিত সঠিক নিয়মে নামায আদায় করা।


    আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ মুসলিমই হানাফি মাজহাবের অনুসারী। তাই হানাফি মাজহাব অনুসারেই নিচে নামাজ পড়ার সংক্ষিপ্ত নিয়ম উল্লেখ করা হলো। এখানে উল্লেখ্য, চার ইমামের যে কারো তরিকা গ্রহণ করলেও সমস্যা নেই।


    ১. প্রথমে ওজুসহকারে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।

    ২. নামাজের নিয়ত করে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাতে হবে। 

    ৩. এরপরে তাকবিরে তাহরিমা পড়ার পর বাম হাতের ওপর ডান হাত রেখে নাভির নিচে হাত বাঁধতে হবে।

     এরপর অনুচ্চৈঃস্বরে পড়তে হবে: ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবি হামদিকা ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।’

    ৪. এরপর অনুচ্চৈঃস্বরে আউজু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়ুন। (তাহাবি : ১/৩৪৭)

    এবার সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। সূরা ফাতিহা উচ্চারণ হলো: 


     সূরা ফাতিহা উচ্চারণ হলো: 


     আউজু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম

     বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম


    আলহামদুলিল্লা-হি রাব্বিল আ-লামীন

    আর রাহমা-নির রাহীম

    মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন

    ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কানাছতা’ঈন

    ইহদিনাসসিরা-তাল মুছতাকীম

    সিরা-তাল্লাযীনা আন’আম তা’আলাইহিম

    গাইরিল মাগদূ বি’আলাইহীম ওয়ালাদ্দাল্লীন। আমিন ।


    শেষ হলে আমিন বলতে হবে। হানাফি মাজহাব মতে, আমিন আস্তে পড়া উত্তম। তবে জোরে আমিন বলার ব্যাপারেও ইমামদের মতামত পাওয়া যায়।

    ৫. সূরা ফাতিহা পড়া শেষ হলে একটি সূরা অথবা তিনটি ছোট আয়াত, যা কমপক্ষে লম্বা একটি আয়াতের সমতুল্য হয়, তাই পড়তে হবে। (আবু দাউদ, হাদিস নং : ৬৯৫)

    ইমামরা বলেন, এই পরিমাণ তিলাওয়াত সালাত বা নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য আবশ্যক। তবে নামাজে কোরআন তিলাওয়াতের সুন্নত পরিমাণের বিষয়ের বিবরণ ফিকহের কিতাবে উল্লেখ করা আছে।

    ৬. এরপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে মাথা নিতম্বের বরাবর করতে হবে। (আবু দাউদ, হাদিস নং : ৭২৯) ।  রুকুতে আঙুলগুলো ছড়িয়ে দিয়ে হাঁটু আঁকড়ে ধরতে হবে। (মুজামে সাগির ২/৪৯৭)

    রুকুতে তিনবার, পাঁচবার বা সাতবার; কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম’ পড়তে হবে। (তিরমিজি, হাদিস নং : ২৪২)

    ৭. এবার রুকু থেকে ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে মাথা উঠান। মুক্তাদি হলে অনুচ্চৈঃস্বরে শুধু ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলতে হবে। এরপর তাকবির পড়ে অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৭৪৭)

    ৮. সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাঁটু, তারপর হাত, তারপর উভয় হাতের মধ্যে প্রথমে নাক এবং পরে কপাল মাটিতে রাখতে হবে। নিজের পেট রান থেকে এবং বাহুকে পার্শ্বদেশ থেকে পৃথক করে রাখুন। হাত ও পায়ের আঙুলকে কিবলামুখী করে রাখতে হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৭৮৫)

    সিজদায় তিনবার, পাঁচবার বা সাতবার; কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ পড়তে হবে। (তিরমিজি, হাদিস নং : ২৪২)

    ৯. এরপর সিজদা থেকে উঠার সময় সর্বপ্রথম মাথা উঠিয়ে উভয় হাত রানের ওপর রেখে স্থিরতার সঙ্গে বসে পড়তে হবে। এরপর তাকবির বলে দ্বিতীয় সিজদা করতে হবে। দ্বিতীয় সিজদায়ও এরপর কমপক্ষে তিনবার তাসবিহ পড়তে হবে। বিজোড় সংখ্যায় এর বেশিও তাসবিহ পড়া যাবে। এরপর জমিনে হাত দ্বারা ঠেক না দিয়ে এবং না বসে সরাসরি তাকবির বলে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। এ পর্যন্ত আমাদের প্রথম রাকাত সম্পন্ন হয়েছে।


    ১০. দ্বিতীয় রাকাত শুরু হলো। এতে হাত উঠাতে হবে না, ছানাও পড়বেন না, আউজুবিল্লাহও পড়তে হবে না। তবে আগের মতো সূরা ফাতিহা ও এর সাথে অন্য একটি সূরা পড়ে রুকু-সিজদা করতে হবে। দ্বিতীয় সিজদা শেষ করে ডান পা খাড়া করে বাম পা জায়নামাজে বিছিয়ে দিয়ে তার ওপর বসে যেতে হবে। তখন হাত রাখতে হবে রানের ওপর এবং ডান পায়ের আঙুলগুলো থাকবে কিবলামুখী। (মুসলিম, হাদিস নং : ৯১২)

    ১১. অতঃপর তাশাহুদ পড়তে হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৭৮৮) 


    তাশাহুদ বা আত্তাহিয়াতু এর উচ্চারণ


    ‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তায়্যিবাত। 

    আসসালামু আলাইকা, আইয়্যু হান্নাবিয়্যু 

    ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। 

    আস সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন।

     আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না

     মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।’


    তাশাহুদ পড়ার সময় ‘আশহাদু আল-লা ইলাহা’ পড়ার সময় শাহাদাত আঙুল উঁচু করে ইশারা করতে হবে। আর ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় আঙুল নামিয়ে ফেলতে হবে।

    তবে তাশাহুদের বাক্য ও আঙুল দিয়ে ইশারা করার বিষয়ে অন্য নিয়মও ইমামদের বক্তব্যে দেখা যায়। তাই বিষয়টি নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি করা কাম্য নয়।

    যদি নামাজ দুই রাকাতবিশিষ্ট হয়, যেমন—ফজরের নামাজ, তাহলে তাশাহুদের পর নিম্নের দরুদ শরিফ পাঠ করতে হবে (মুসলিম, হাদিস নং : ৬১৩)–

    দরুদ শরীফ এর উচ্চারণ



    ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মদ, 

    ওয়ালা আলি মুহাম্মদ, 

    কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা 

    ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, 

    ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। 

    আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মদ, 

    ওয়ালা আলি মুহাম্মদ, 

    কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা 

    ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, 

    ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।’


    এরপর পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত যে কোনো দোয়া পাঠ করতে হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ১/২৯৮)


    দোয়ায়ে মাসুরা বা দোয়া মাসুরার উচ্চারণ


    আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরাও 

    ওলা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা,
     
    ফাগফিরলি মাগফিরাতাম-মিন ইনদিকা, 

    ওয়ার হামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।’



    অথবা এই দোয়া পড়বেন—

    ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনইয়া হাসানাহ, 

    ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়া কিনা আজাবান-নার।’


    ১২. অতঃপর ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলতে বলতে ডানে এবং বাঁয়ে মাথা ফেরাতে হবে। সালাম ফেরানোর সময় পাশের নামাজি ব্যক্তি এবং ফেরেশতাদের কথা স্মরণ করবেন।


    যদি নামাজ তিন রাকাতবিশিষ্ট হয়, যেমন—মাগরিবের নামাজ, তখন প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পর আর কিছু পড়বে না। বরং ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সোজা দাঁড়িয়ে যেতে হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২২৪)


    তবে তৃতীয় রাকাতে শুধু সুরা ফাতিহা পড়তে হবে। আর নামাজ যদি চার রাকাতবিশিষ্ট হয়, যেমন—জোহর, আসর ও এশার নামাজ, তখন চতুর্থ রাকাতেও শুধু সুরা ফাতিহা পড়তে হবে। এরপর প্রথম দুই রাকাতের মতো রুকু-সিজদা করে দুই রাকাত সম্পন্ন করে শেষ বৈঠকে বসবেন। সেখানে উল্লিখিত পদ্ধতিতে তাশাহহুদের পর দরুদ এবং এরপর দোয়ায়ে মাসুরা পড়ে উভয় দিকে সালাম ফেরাতে হবে।



    পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার নিয়ম


    ফজর নামাজের নিয়ম


    ফজরের নামাজ ( صلاة الفجر‎) 

    অবশ্য পালনীয় দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দিনের শুরুর নামাজ। ফজরের নামাজ আদায় করেই মুসলিমরা তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম শুরু করেন। ফজরের নামাজ দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত ফরজ নামাজ নিয়ে গঠিত। 


    আপনারা নামাজের নিয়মাবলি থেকে দুই রাকাআত নামাজের জন্য নামাজের নিয়ম ও প্রয়োজনীয় দোয়া দেখে নিতে পারেন।


    সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত ফজরের নামাজের সময়। অর্থাৎ ফজরের নামাজ খুব দ্রুত পড়ে ফেলতে হয়।


    যোহরের নামাজের নিয়ম


    যোহরের নামাজ বা সালাতুল যুহর (صلاة الظهر‎)


    দৈনিক নামাজগুলোর দিক থেকে এটি দ্বিতীয়। এটি ঠিক দুপুর থেকে আসরের পূর্ব পর্যন্ত আদায় করা হয়। 

    যোহরের নামাজ প্রথমে চার রাকাত সুন্নত, চার রাকাত ফরজ ও এরপর দুই রাকাত সুন্নত নিয়ে গঠিত।

     নামাজি ব্যক্তি যদি মুসাফির অবস্থায় থাকে তাহলে সে চার রাকাত ফরজকে সংক্ষিপ্ত করে দুই রাকাত করতে পারে ও সুন্নত আদায় না করতে পারে। 

    শুক্রবার যোহরের পরিবর্তে জুম্মার নামাজ আদায় করা হয়। জুম্মা ও যোহরের সময় শুরু ও শেষ হওয়ার সময়সীমা একইরকম।


    আসরের নামাজের নিয়ম


    আসরের নামাজ (صلاة العصر‎)

     দৈনিক নামাজের ক্রমের দিক দিয়ে এটি তৃতীয়। এটি বিকেলের সময় আদায় করা হয়। 

    আসরের নামাজ চার রাকাত সুন্নত ও চার রাকাত ফরজ নিয়ে গঠিত। 

    তবে ব্যক্তি মুসাফির অবস্থায় থাকলে চার রাকাত ফরজকে সংক্ষিপ্ত করে দুই রাকাত করে কসর আদায় করতে পারবেন।


    মাগরিবের নামাজের নিয়ম


    মাগরিবের নামাজ (صلاة المغرب‎) 

    দৈনিক নামাজগুলোর ক্রমের মধ্যে চতুর্থ। এটি সূর্যাস্তের পর থেকে গোধূলি পর্যন্ত আদায় করা যায়। এটিও দ্রুততম সময়ে পড়ে ফেলা উত্তম। 


    মাগরিবের নামাজ তিন রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নত নিয়ে গঠিত।

     ফরজ অংশ সাধারণত ইমামের নেতৃত্বে জামাতের সাথে আদায় করা হয় আবার একা ও আদায় করা যায়। তবে ব্যক্তি যদি মুসাফির অবস্থায় থাকে তাহলে শুধু তিন রাকাত ফরজ আদায় করতে পারে কসর হিসেবে।



    এশার নামাজের নিয়ম


    এশার নামাজ (صلاة العشاء‎) 


    দৈনিক নামাজগুলোর মধ্যে এটি পঞ্চম। এটি রাতের সময় আদায় করা হয়। 


    এশার নামাজের ফরজ চার রাকাত। এরপর দুই রাকাত সুন্নত ও তিন রাকাত বিতর নামাজ রয়েছে। ফরজ নামাজের পূর্বে চার রাকাত সুন্নত নামাজ পড়া হয়। 

    তবে এটি না পড়লে কোনো গুনাহ হবে না। ব্যক্তি মুসাফির অবস্থায় থাকলে চার রাকাত ফরজকে সংক্ষিপ্ত করে দুই রাকাত করতে পারেন কসর হিসেবে।


    কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমল জিন্দেগি যাপন করে। আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

    পরবর্তী পোস্ট পূর্ববর্তী পোস্ট
    কোন মন্তব্য নেই
    এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

    দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

    comment url